মিয়োসিস কোষ বিভাজন একটি গুরুত্বপূর্ণ জীবন্ত প্রক্রিয়া, যা জীবাণুগুলির জীবন চক্রে ঘটে। এটি জীবাণুগুলির সংখ্যা বৃদ্ধি ও উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মিয়োসিস কোষ বিভাজনে মূলত দুটি প্রধান ধাপ রয়েছে: মিয়োসিস-১ এবং মিয়োসিস-২ , যা নিয়ে এই পোস্টে আমরা বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করেছিঃ
আজকের এই পোস্টে আমরা জানবো,
- মিয়োসিস কোষ বিভাজন কাকে বলে ?
- মিয়োসিস কোষ বিভাজনের বৈশিষ্ট্য
- মিয়োসিস কোষ বিভাজন প্রক্রিয়া
এই পোস্টটি পরার পরে মিয়োসিস নিয়ে তোমাদের সমস্ত প্রস্নের উত্তর পেয়ে যাবে। তাই এই পোস্টটি শেষ পর্যন্ত অবশ্যই পরবে আশা করছি।
মিয়োসিস কোষ বিভাজন কাকে বলে:
যে কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় নতুন সৃষ্ট কোষের ক্রোমোজোম সংখ্যা মাতৃকোষের ক্রোমোজোম সংখ্যার অর্ধেক হয়, তাকে মিয়োসিস বা মীয়োসিস বলে।
প্রথম এরূপ কোষবিভাজন প্রত্যক্ষ করেন ১৮৮৭ খ্রিষ্টাব্দে বোভেরী এবং এর নামকরন করেন জে. বি. ফারমার (J.B. Farmer) ও জে. ই. এস. মুর (J.E.S. Moore) ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে।
মিয়োসিস কোষ বিভাজনের বৈশিষ্ট্য:
কোষ বিভাজনের একটি বিশেষ প্রক্রিয়া হলো মিয়োসিস, যা বীজ ও ডিম্ব কোষের প্রজননে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রক্রিয়ায়, একটি মাতৃ কোষ থেকে চারটি নতুন কোষ তৈরি হয়, যাদের প্রতিটির ক্রোমোজোম সংখ্যা মাতৃ কোষের ক্রোমোজোমের অর্ধেক।
এর ফলে, যৌন প্রজননের সময় যখন মা ও বাবার কোষ মেলে, তখন সন্তানের কোষগুলোতে পূর্ণ ক্রোমোজোম সংখ্যা (অর্থাৎ, মানুষের ক্ষেত্রে ৪৬) থাকে।
মিয়োসিস বিভাজন দুই ধাপে সম্পন্ন হয়। প্রথমে, ডিএনএ দ্বিগুণ হয় এবং ক্রোমোসোমগুলি জোড়া জোড়া হয়।
দ্বিতীয় ধাপে, চারটি কোষ উৎপন্ন হয় যাদের মধ্যে প্রত্যেকের ক্রোমোজোমের সংখ্যা অর্ধেক। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রজাতির বৈশিষ্ট্য প্রজন্মান্তরে সংরক্ষিত হয় এবং জৈব বৈচিত্র্য বৃদ্ধি পায়।
মিয়োসিস কোষ বিভাজন প্রক্রিয়াঃ
Image Credit: Wikipedia
মিয়োসিস প্রক্রিয়ায়, একটি মূল কোষ সাধারণত দুই ধাপে বিভক্ত হয়, এই দুই ধাপকে যথাক্রমে মিয়োসিস১ এবং মিয়োসিস২ নামে চিহ্নিত করা হয়।
প্রথম ধাপে ঘটে যায় ক্রোমোজোম সংখ্যার হ্রাস, যার ফলে উৎপন্ন হওয়া কোষগুলির প্রতিটির ক্রোমোজোমের সংখ্যা মূল কোষের অর্ধেক হয়ে যায়। এই কারণে প্রথম বিভাজনকে হ্রাস বিভাজন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
দ্বিতীয় বিভাজনে, কোষের ভাগ হওয়া প্রক্রিয়াটি মাইটোসিস বিভাজনের সংগে মিল রেখেছে, যা আরও বৃদ্ধি পায়। এর ফলে, এই দুই ধাপের মাধ্যমে জেনেটিক বৈচিত্র এবং সম্পদের সামঞ্জস্য বজায় থাকে, যা বংশগতির লক্ষণগুলিকে প্রতিধারণ এবং উন্নত করে।
Image Credit: Wikipedia
মিয়োসিস-১ঃ
মিয়োসিস ১ কে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে, সেগুলি হলঃ-
প্রোফেজ-১:
প্রোফেজ-১ হল মিয়োসিসের প্রথম পর্যায়, যা বিশেষভাবে জিনগত বৈচিত্র্য সৃষ্টিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পর্যায়ে কিছু জটিল এবং নির্দিষ্ট ঘটনা ঘটে যা কোষ বিভাজনের প্রক্রিয়াকে বিশেষ করে তোলে। এই পর্যায় টিকে পাঁচটি ভাগে ভাগ করা হয়, যেমন-
লেপ্টোটিন: মিয়োসিসের প্রোফেজ-১ পর্যায়ের প্রথম অবস্থা হল লেপ্টোটিন। এই পর্যায়ে, ক্রোমোজোমগুলি ধীরে ধীরে সংকোচিত হতে থাকে এবং কোষের মধ্যে চিকন সুতোর মতো দৃশ্যমান হয়ে উঠে।
এই পর্যায়ে ক্রোমোজোমগুলি এখনো পূর্ণরূপে জোড়া বেঁধে যায় নি, কিন্তু তারা আস্তে আস্তে জোড়া বাঁধার প্রস্তুতি নেয়। লেপ্টোটিনের এই ধাপ ক্রোমোজোমের সংকোচন এবং পুনর্বিন্যাসের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
জাইগোটিন: জাইগোটিন পর্যায়ে, ক্রোমোজোমগুলি তাদের হোমোলগাস সঙ্গীর সাথে জোড়া বাঁধতে শুরু করে। এই পর্যায়ে ক্রোমোজোমগুলি আরো স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হয়, এবং তারা একে অপরের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে মিলিত হতে থাকে।
জাইগোটিনে হোমোলগাস প্যারিং প্রক্রিয়া জেনেটিক বৈচিত্র্য সৃষ্টিতে একটি মৌলিক ভূমিকা রাখে, যা পরবর্তী ক্রসিং ওভার প্রক্রিয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়।
প্যাকাইটিন: প্যাকাইটিন পর্যায়ে, ক্রোমোজোমগুলি পূর্ণরূপে জোড়া বেঁধে থাকে এবং ক্রসিং ওভার ঘটে। এই পর্যায়ে ক্রোমোজোমগুলির অংশবিশেষগুলি একে অপরের সাথে জেনেটিক মেটেরিয়াল বিনিময় করে।
প্যাকাইটিনের এই প্রক্রিয়া জীবনের জেনেটিক ডাইভার্সিটি এবং অভিযোজন সাধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ডিপ্লোটিন: ডিপ্লোটিন হল মিয়োসিসের প্রফেজ-১ এর পঞ্চম পর্যায় যা জৈবিক কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পর্যায়ে, হোমোলগাস ক্রোমোজোমের জোড়াগুলি যা পূর্বের পর্যায়ে চ্যাজমাটা গঠন করেছিল, তারা আলগা হয়ে আসে কিন্তু একে অপরের সাথে যুক্ত থাকে।
এই পর্যায়ে ক্রোমোজোমগুলির গাঁথুনি আরও সংকোচিত হয়ে আসে এবং তারা মাইক্রোস্কোপের নিচে পুরোপুরি দৃশ্যমান হয়। এই পর্যায় মূলত ক্রোমোজোমগুলির পুনর্গঠন ও প্রস্তুতি নেয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যা পরবর্তী মেটাফেজ পর্যায়ে মুভমেন্ট এর জন্য প্রয়োজন।
ডায়াকাইনেসিস: ডায়াকাইনেসিস হল প্রোফেজ-১ এর শেষ পর্যায়, যা কোষের জেনেটিক উপাদানগুলির পুরোপুরি বিন্যাস ও বিভাজনের পূর্ব প্রস্তুতি নেয়ার সময়। এই পর্যায়ে, ক্রোমোজোমগুলি আরও সংকুচিত এবং স্পষ্ট হয়ে ওঠে, যা তাদেরকে স্পিন্ডল অ্যাপারেটাসের সাথে সংযুক্তির জন্য তৈরি করে।
এই সময়ে নিউক্লিয়ার মেমব্রেন ভেঙে যায় এবং নিউক্লিওলাই উধাও হয়, যা ক্রোমোজোমগুলির মুক্ত বিন্যাস এবং বিভাজনের পথ প্রশস্ত করে দেয়। এই পর্যায় মিয়োসিসের প্রথম ভাগের সমাপ্তি ঘটায় এবং কোষকে মেটাফেজ-১ এর জন্য পুরোপুরি তৈরি করে তোলে।
মেটাফেজ-১:
মেটাফেজ-১ মিয়োসিসের দ্বিতীয় পর্যায় যেখানে ক্রোমোসোমগুলি কোষের মাঝখানে অবস্থান করে সাজানো হয়। এই সময়ে, কোষের স্পিন্ডল কাঠামো পুরোপুরি বিকশিত হয়ে যায়, এবং প্রতিটি ক্রোমোসোমের কাইনেটোকোর স্পিন্ডল ফাইবারের সাথে যুক্ত হয়ে গেছে।
এই পর্যায়ের মূল উদ্দেশ্য হলো ক্রোমোসোমগুলিকে যথাযথভাবে সাজানো, যাতে পরবর্তী পর্যায়ে তাদের বিভাজন সহজ হয়। মেটাফেজ প্লেটে ক্রোমোসোমগুলির সারিবদ্ধ বিন্যাস এই প্রক্রিয়ার একটি চাক্ষুষ চিহ্ন।
অ্যানাফেজ-১:
অ্যানাফেজ-১ মিয়োসিসের তৃতীয় পর্যায়, যেখানে হোমোলগাস ক্রোমোসোম জোড়াগুলি একে অপর থেকে পৃথক হয়ে বিপরীত দিকে সরে যায়। স্পিন্ডল ফাইবারগুলি ক্রোমোসোমগুলিকে টেনে কোষের দুই প্রান্তে নিয়ে যায়, এতে করে প্রতিটি নতুন কোষে হোমোলগাস ক্রোমোসোমের একটি সেট পৌঁছায়।
এই পর্যায় নিশ্চিত করে যে পরবর্তী কোষগুলি সঠিক জেনেটিক উপাদান পাবে।
টেলোফেজ-১:
টেলোফেজ-১ মিয়োসিসের চতুর্থ পর্যায় এবং প্রথম বিভাজন প্রক্রিয়ার শেষ ধাপ। এই সময়ে, ক্রোমোসোমগুলি কোষের দুই প্রান্তে পৌঁছে গেলে, কোষ ঝিল্লি পুনর্গঠিত হয় এবং নিউক্লিয়াস দুটি নতুন নিউক্লিয়াসে পুনর্গঠিত হয়।
এর ফলে, মূল কোষ দুটি স্বতন্ত্র কোষে বিভক্ত হয়, প্রতিটি কোষে অর্ধেক ক্রোমোসোম থাকে। এই পর্যায়ের শেষে সাইটোকাইনেসিস ঘটে, যা কোষ বিভাজনের প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ করে।
মিয়োসিস ২ঃ
মিয়োসিস-২ মিয়োসিস প্রক্রিয়ার দ্বিতীয় ও শেষ পর্যায়, যা
- প্রোফেজ-২,
- মেটাফেজ-২,
- অ্যানাফেজ-২, এবং
- টেলোফেজ-২ পর্যায়ের পর ঘটে।
এই পর্যায়ে, কোষগুলি আবারও বিভক্ত হয়, কিন্তু এবার কোনো ডিএনএ প্রতিলিপি হয় না।
মিয়োসিস-২ মূলত মিটোসিসের মতোই ঘটে এবং এর উদ্দেশ্য হলো প্রতিটি কোষ থেকে আরও দুটি কোষ তৈরি করা, যাতে প্রতিটি নতুন কোষে ঠিক অর্ধেক ক্রোমোসোম থাকে।
এই পর্যায়ের শুরুতে প্রোফেজ-২ ঘটে যেখানে ক্রোমোসোমগুলি ঘনীভূত হয়, মেটাফেজ-২ এ ক্রোমোসোমগুলি মেটাফেজ প্লেটে সাজানো হয়, অ্যানাফেজ-২ এ ক্রোমোসোমগুলির সিস্টার ক্রোমাটিডগুলি আলাদা হয়ে যায়, এবং টেলোফেজ-২ এ ক্রোমোসোমগুলি নতুন নিউক্লিয়াসের মধ্যে স্থানান্তরিত হয়।
এর ফলে প্রতিটি মূল কোষ থেকে চারটি কোষ তৈরি হয়, প্রতিটি কোষে মাত্র একটি সেট ক্রোমোসোম থাকে। এই কোষগুলি যৌন প্রজননের জন্য গামেট হিসেবে কাজ করে, যেখানে তারা পরবর্তী প্রজন্মের জেনেটিক বৈচিত্র্য নিশ্চিত করে।
সমাপ্তিঃ
মিয়োসিস কোষ বিভাজন হলো একটি জটিল এবং সুসংহত প্রক্রিয়া যা যৌন প্রজননে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রক্রিয়াটি মূলত জিনগত বৈচিত্র্য নিশ্চিত করে থাকে এবং প্রজাতির উন্নয়নে সহায়ক হয়।
মিয়োসিসের মাধ্যমে কোষের ক্রোমোসোম সংখ্যা অর্ধেক হয়ে যায়, যাতে করে শুক্রাণু এবং ডিম্বাণুর সংগমে সন্তানের জিনগত স্থায়িত্ব বজায় থাকে। এই বিভাজনের প্রতিটি ধাপ যেমন প্রোফেজ, মেটাফেজ, অ্যানাফেজ এবং টেলোফেজ, পরবর্তী কোষগুলিকে নির্দিষ্ট জিনেটিক ম্যাটেরিয়াল প্রদান করে।
সবশেষে তোমার জন্য রয়েছে একটি সুখবর,
মিয়োসিস কোষ বিভাজন এর এই জটিল বিষয়টি আরও ভালো ভাবে বুঝতে এবং HSC পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জন করতে, AccessTUTOR-এর HSC Biology Full Course টি তোমার জন্য আদর্শ একটি কোর্স।
যেখানে ১০০+ লেকচার এর সাথে, Sabiul Islam (Tiger) ভাই এর সাহায্যে আমাদের সম্পূর্ণ অনলাইন ভিত্তিক কোর্সে যোগদান করে তুমি জীববিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে গভীর ধারণা পেতে পারবে এবং তোমার সংশয় দূর করতে পারবে সুনিশ্চিত।
তাই, আর দেরি না করে AccessTUTOR -এর HSC Biology Full Course আজই Enroll করে ফেলো এবং HSC Biology পরিক্ষায় ভালো রেজাল্টের দিকে অন্যদের থেকে একধাপ এগিয়ে থাকবে অবশ্যই।